কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল বাজার। সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ডে জুতা সেলাই করেন তিনি। ৩৫ বছরের মতো বয়স। তার নাম বাসন্তী রবি দাস। সাধারণত নারীদের এরকম উন্মুক্ত স্থানে এই এলাকার কেউ কখনও জুতা সেলাই করতে দেখেননি। তাই এই পথে যারা যান তারা মাথা তুলে তাকে এক নজর দেখেন। বাসন্তীর মনোযোগ জুতা সেলাই, কালি আর পালিশে। কারণ জুতার কালির মতো সংসারটায় আনন্দের রঙ না লাগাতে পারুক জোড়া তালি দিয়ে হলেও যে চালাতে হবে। অবশ্য সব সময় কাজও থাকে না। সে সময় অনাগত দিন নিয়ে বসে বসে ভাবতে থাকেন। ভাবেন কিভাবে চলবে তার সংসার। দিনে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা রোজগার হয় তা। তা দিয়ে স্বামী, তিন সন্তানের খাবারের ব্যবস্থা হয়, ঘর ভাড়া দেন। তার কোন বড় স্বপ্ন নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই আর দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াই বড় স্বপ্ন বাসন্তীর।
বাসন্তী রবি দাস জানান, তার স্বামী কার্তিক রবি দাস দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড। তার এক হাত এক পা অচল। স্বামী অক্ষম হয়ে পড়লে তিনি সেলাইয়ের বাক্স নিয়ে বাজারে বসে পড়েন। প্রথমে বিভিন্ন জন নানা কথা বলতো।‘ আর কাজ নাই, মহিলাদের জুতা সেলাইয়ের কি দরকার’ ইত্যাদি। এখন পেটের দায়ে তা গা-সওয়া হয়ে গেছে। নিজেদের কোন জায়গা নেই। বাজারে একটি মাচা ঘরে ভাড়া থাকেন। যা আয় তা দিয়ে এক ছেলে, দুই মেয়ে আর স্বামীর খাবার যোগান দেন। তারপরে রয়েছে বাসা ভাড়া। তিনি বা তার স্বামী কোন ভাতা পান না বলে তিনি জানান।
মহিচাইল বাজার কৃষি ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন রনি বলেন, ব্যাংকে যেতে বাসন্তীকে জুতা সেলাই করতে দেখি। তার বাসাও ব্যাংকের নিকটে। একদিন গিয়ে দেখলাম তার মানবেতর জীবন। সরকারের সহায়তা পেল পাঁচটি মানুষ ভালো থাকতে পারবে।
চান্দিনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাস বলেন, বিষয়টি আমরা খোঁজ নেবো। তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন।
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com