বড় সংশোধনী ছাড়াই আজ পাস হচ্ছে অর্থ বিল, কাল বাজেট
মোহাম্মদ আবদুল হালিম মোহাম্মদ আবদুল হালিম
বার্তা সম্পাদক
Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই আজ সোমবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থ বিল পাস হচ্ছে। আর আগামীকাল মঙ্গলবার পাস হবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। পরদিন ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখান থেকে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই। তবে মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। পাশাপশি প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটেও কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে নানা সতর্কতা সত্ত্বেও একের পর এক সংসদ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে যাতে কেউ করোনা আক্রান্ত না হন, সেজন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। ইতোমধ্যে অধিবেশনে যোগ দেবেন, এমন সংসদ সদস্যদের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। বাজেট পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন মাত্র ৮ কার্যদিবসে শেষ হচ্ছে। গত ১০ জুন শুরু হওয়া অধিবেশন এ পর্যন্ত ৫ কার্যদিবস বসেছে। আজ সোমবার অর্থ বিল পাস ও মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাজেট পাস হবে। এরপর একদিন সমাপনী হবে।
অর্থাৎ, অতীতে বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এটি হচ্ছে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। যে অধিবেশনে মাত্র একদিন প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা আলোচনার পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওযায় তা কমিয়ে আনা হয়। অতীতে বাজেটের ওপর ৬০ থেকে ৬৫ ঘণ্টা আলোচনার রেকর্ড রয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার পাশাপাশি উপস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকছেন। বিদ্যমান আসন বিন্যাস পরিবর্তন করে তিন থেকে চার ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আপৎকালীন নতুন আসন বিন্যাস করা হয়েছে। অধিবেশনে কারা যোগ দেবেন, তার তালিকা করে প্রধান হুইপের দফতর থেকে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রবীণ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে আজ জাতীয় সংসদে ২০২০ সালের অর্থ বিল পাস করার সময় অর্থমন্ত্রী বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মোবাইল ফোনে কথা বলা, খুদে বার্তা পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
নিয়ম অনুযায়ী, গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব পরপরই তা কার্যকরও হয়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ১২ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী কোনো জবাব না দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে জবাব দেয়ার দায়িত্ব দেন।
সেদিন এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমাদের দেশের মানুষ অকারণে বেশি কথা বলে। যে পরিমাণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়, তাতে দশমিক ৫ শতাংশ খরচ বাড়বে। এতে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। তার এমন বক্তব্যে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাই সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে সরকার।
সূত্র জানায়, বাজেট প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হয়ে যায়। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, খুদে বার্তাসহ অন্যান্য সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। সবমিলিয়ে এখন ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার পায় ২৫ টাকা। সম্পূরক শুল্কহার আবার আগের জায়গায় ফেরত গেলে সরকার পাবে ২২ টাকা। আর গ্রাহক ৭৮ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন। বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ৩ টাকা।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটেও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবারের বাজেটে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে দাবিকৃত ভ্যাটের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ বা জমা রাখার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হতে পারে।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ কোটি টাকার ভ্যাট বাড়তি দাবি করল। এত দিন ওই ভ্যাটদাতা চাইলে দাবিকৃত ভ্যাটের ১০ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকা জমা করে আপিল দায়ের করতে পারতেন। নতুন প্রস্তাবে ওই ব্যবসায়ীকে ২০ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। বাজেট ঘোষণার পরপরই ব্যবসায়ীরা এই প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে এখন তা আগের ১০ শতাংশ হারে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুল্ক-করের ২২ হাজারের বেশি মামলা আছে। এসব মামলায় অনাদায়ি পড়ে আছে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব।
এবার ভ্যাট আইনের ৪৭ নম্বর ধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি করযোগ্য সরবরাহ পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট কর মেয়াদে যে পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করেন, ওই ব্যক্তির প্রাপ্য উপকরণ কর রেয়াত সেই পরিমাণের ভিত্তিতে নিরূপণ হবে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে কোনো ব্যবসায়ী ১০০ টাকার উপকরণ কিনলে পুরোটাই ফেরত পাবেন। প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্নেও সময় দেয়া উপকরণ ব্যবহারের হিসাব অনুযায়ী রেয়াত নিতে হবে না।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতি সচল রাখা, মানুষের জীবন রক্ষা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য চারটি কৌশলের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। সেগুলো হলো- সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দেশে-বিদেশে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয় কৌশলটি হলো, হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগণকে সুরক্ষা দেয়া ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। তবে এ কৌশলটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।