“চরম অস্থিত্ব সংকটে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়! “

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২০

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রায় সব দেশেই সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে চাইলেও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে তা চাইতে দেখা যায় না। বরং সংখ্যালঘু সমাজকে কোণঠাসা করে রাখতেই তাদের তৎপর দেখা যায় পৃথিবীর সব দেশেই। তেমন ঘটনাই ঘটছে মিয়ানমার, চীন ও কাশ্মীর ও অন্যান্য দেশে। ফলে বৈষম্যে ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে পৃথিবীর সব সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়।
সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের কথা বললেই মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথা মনে পড়ে যায়।
বর্মী আইনে রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নন। নাগরিক অধিকার তাঁদের প্রাপ্য নয়। দেশের ভেতরে ভ্রমণ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি চাইতে হয় রোহিঙ্গাদের।
ফলে তাঁরা মৌলিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। যেমন  খাদ্য,বস্ত্র,শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা’র কোনটাই তাঁরা পাই না।
মূলত একটি জাতিকে মৌলিক অধিকার গুলো থেকে যুগযুগ ধরে বঞ্চিত রাখলে তাঁরা স্বভাবতই অজ্ঞ ও বর্বর হয়ে উঠে। আর আমরা প্রতিনিয়তই তাঁদের অজ্ঞ ও বর্বর বলে অবিহিত করে অাসছি। এ দায় তাঁদের একার নয়! বরং আমাদের মতো তথাকথিত সভ্য ও বিজ্ঞ সম্প্রদায় এর জন্য অনেকাংশই দায়ী বটে। মূলত আমরা তাঁদের জন্য খাদ্য,বাসস্থান ও মানবতার মুখ নিঃসৃত কিছু বাণী ছুটে দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে সক্ষম নয়।
অন্য দিকে
আরাকানে রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দীর্ঘ দিনের বিরোধ ও উত্তেজনা গত দু’বছরে ক্রমে বেড়েছে। ক্রমে দুর্ভর হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনযাত্রা। চলতি সহিংসতা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত আইনি ও জাতিগত ক্ষেত্রেই সীমায়িত ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা। ইদানীং সমস্যাটি গড়িয়েছে ধর্মীয় পরিসরে। উগ্রপন্থী বৌদ্ধ মোহান্তেরা ও মুসলিম গোষ্ঠীগুলো আজকাল পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ঊভয় পক্ষ ইন্ধন পাচ্ছে বাইরে থেকে।
 বৌদ্ধ সাধুরা ও রাখাইনরা প্রকাশ্যে প্রচার চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া না দেয়া হচ্ছে সরকারের এখতিয়ার। এ প্রশ্নে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। অন্যদিকে এরাই সরকারকে চাপে রেখেছে এই বলে যে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া যাবে না। কারণ রোহিঙ্গারা হচ্ছে বেআইনি বাঙালি অভিবাসী। রোহিঙ্গাদের দাবি, তাঁরা আরাকান রাজ্যের বাসিন্দা কয়েকশ’ বছর ধরে। ইতিহাসসম্মত তথ্য ও সাক্ষ্য প্রতিটি মঞ্চে পেশ করে রোহিঙ্গারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, রাজ্যের ও বার্মার ভূমিপুত্র হিসেবে তাঁরা আরাকানে বসবাস করছেন।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, “প্রায় অর্ধশত বছর সামরিক একনায়কের শাসনে থাকার দরুন চলমান সংকট মোকাবিলার সামর্থ্য মিয়ানমার হারিয়ে বসেছে। মিলিটারি ডিক্টেটরের পলিসির কারণে নানা সমস্যায় ভুগছে আজ পুরো দেশ। সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে জাতিগত সংখ্যালঘু লোকগুলোর অবস্থা”।
আর তাদের মতে, “কেবল রোহিঙ্গা সম্প্রদায় নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের নিবন্ধিত করানোর ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত বাধাসহ বহুতর বৈষম্য সংকটে ভুগতে বাধ্য করা হচ্ছে খৃস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কাচিন, শাম, চীন ও ইন্ডিয়ানদেরও”।
বহু চিন্তাবিদের বক্তব্য হচ্ছে, “সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যকার শত্রুতার শেকড় বার্মার রাষ্ট্রীয় জীবনের অনেক গভীরে প্রবেশ করে বসেছে”।
চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের সহিংস উচ্ছেদে তৎপর রাখাইন বৌদ্ধদেরও প্রচ- ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্মী সংখ্যাগুরুদের বিরুদ্ধে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বর্মী প্রশাসনের মনোভাব সে তুলনায় অনেক বেশি বৈরী। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব পাচ্ছেন না। আরাকানের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকার বাইরে তাদের যাওয়া-আসার অধিকার নেই।
কট্টরপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও রাখাইন নেতাদের সঙ্গে বার্তালাপ শেষে আন্তর্জাতিক ভাষ্যকারদের অভিমত হচ্ছে, রোহিঙ্গারা শুধু জাতিগত ও ধর্মীয় বাধা-বৈষম্যেই ভুগছেন না, সামাজিক বৈষম্যে ভুগতেও তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়গত স্বার্থে রোহিঙ্গা নেতৃত্ব সুসংগঠিত হলেও তারা মুশকিলে পড়েছেন দুটো বড় সমস্যার কারণে।
একটি আসছে বার্মার অন্যান্য মুসলমানদের পক্ষ থেকে এবং অন্যটি জন্ম দিচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে ও করাচির কোরাঙ্গিতে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসা উগ্র গোষ্ঠীগুলো।
‘ইউএনএস সিআর-এর মতে,  রোহিঙ্গারা এশিয়ার প্রায় দেশসহ পৃথিবীর সব দেশে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে
রয়েছে। এদের সবচেয়ে বড় অংশ বাংলাদেশে। বার্মা সীমান্ত থেকে মাত্র ২ কি.মি. দূরত্বে দুটি সরকারি ক্যাম্পেসহ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের অনিবন্ধিত ক্যাম্প গুলোতে আশ্রিত। শরণার্থীদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে বাংলাদেশ সরকারও। শরণার্থীদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুব সহজ কোনো কাজ নয়।আর রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে এ সমস্যা সমাধান সৃষ্টির কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।
ভারত ও কাশ্মীরে মুলিমদের অধিকার হরণ:
কাশ্মীরের মুসলিমদের অস্থিত্ব সংকটের দিকে ঢেলে দিচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।
ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরকে যে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত এলাকার মর্যাদা দিয়েছিল ৩৭০ ধারা – তা বাতিল করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
এই ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ যোগ হয়েছিল ভারত ও কাশ্মীরের নেতাদের দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে। বিধানটিতে জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়া হয়, তা ছাড়া পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে কাশ্মীরের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
কিন্তু ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির নির্বাচনী ওয়াদা ছিল এটা বাতিল করা। তাই তারা নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী তা বালিত করে কাশ্মীরের মুসলিমদের অধিকার হরণ অস্থিত্ব সংকটে ঢেলে দিচ্ছে ফলে ভূ-স্বর্গে আজ অনাহারে  মানুষ মরছে। যার আমরা পত্রিকা ও নিউজপিডে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছি।
অন্যদিকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার  সম্প্রতি দেশটিতে নাগরিকত্ব আইন পাশের মধ্যে দিয়ে  যুগযুগ ধরে বসবাসরত মুসলিমদের নাগরিকত্বহীন করার পায়তারা চালাচ্ছে।
উইঘুর মুসলিম নির্যাতন:
সম্প্রতি চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বন্দিশিবিরে আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে সরকারি একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। চীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই নথিতে উঠে এসেছে।
এ সংবাদটি নিউইয়র্ক টাইমস এই নথির বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে। এ ছাড়া ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশ নিজেদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।
চীনের একজন ঊর্ধ্বতন রাজনীতিকের কাছ থেকে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা নথিটি ফাঁস হয়েছে।এতে দেখা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিভাবে ২০১৪ সালে অঞ্চলটি সফরকালে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অঞ্চলটির মুসলিমদের ব্যাপারে বেইজিংয়ের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
ওই সময় একটি ট্রেন স্টেশনে হামলার পর অঞ্চলটি সফর করেন শি জিনপিং। ওই হামলার জন্য উইঘুরদের দায়ী করা হয়। সফরকালে ও পরে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কঠোরভাবে সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় উইঘুর মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো অনুকম্পা না দেখানোরও নির্দেশ দেন জিনপিং।
শুধু নৃতাত্ত্বিক উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানরাই নয়; বরং একই অবস্থা অঞ্চলটির অন্য মুসলিমদেরও।
উইঘুরদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে  যুক্তরাষ্ট্র বলছে, “চীনের লড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং জিনজিয়াং থেকে উইঘুর মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বেইজিং”।
প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। বন্দিদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে দেশটি।
আর আমাদের ব্যর্থতা এই যে আমরা শক্তিশালী চীনের এমন অমানবিক অাচরণের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
তাই বলা যায়  আজ শুধু মিয়ানমার, ভারত কিংবা চীনে নয় বরং পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশেই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর চলছে অমানবিক অাচরণ। এজন্য  বলা যায় যে, পৃথিবীর সংখ্যালঘু মুসলিমরা আজ চরম অস্থিত্ব সংকটে রয়ছে। আর এ দায় শুধু তাঁদের একার নয় বরং আমাদের মতো স্বার্থান্বেষী তথাকথিত মুসলিম সম্প্রদায়ের কারণ আজ আমরা নিজেদের মধ্যে স্বার্থ, মারামারি-হানাহি নিয়ে ব্যস্ত অন্যদিকে পৃথিবীর প্রায় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় চরম নির্যাতন ও অস্থিত্ব সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে ওআইসি সহ মুসলিম সংস্থা গুলো চোখে পড়ার মতো উল্লেখ যোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুক ও বোঝার তাওফিক দিক, আমিন।
        লেখক,
  –হাসান আল মাহমুদ
     ছাত্র,
   বি,এ অনার্স ১ম বর্ষ(ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ) ।
  আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।