রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও দায়িত্বরত সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত দুই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আনসারের উপপরিচালক মেহেনাজ তাবাস্সুম রেবিন বলেন, এই ঘটনার পর সেখান থাকা দুই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।প্রত্যাহারকৃত এই দুই আনসার সদস্যের একজনের নাম রফিকুল ইসলাম ও অন্যজনের নাম আফসার।
তিনি আরও বলেন, আনসার সদস্যরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন। মুগদা হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও চাইলে নিজেই নমুনা পরীক্ষা বন্ধা করতে পারেন না। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ীই বন্ধ করার কথা কবলেছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হঠাৎ করে বন্ধ করার কথা বলার বিষয়টি সেখানে হয়তো রোগী বা সেবা প্রত্যাশি মেনে নিতে পারেননি। এরপর অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনা ঘটে। এজন্য জড়িত ওই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য ৪০ জনকে টিকিট দেয়া হয়। কিন্তু ৩৪ জনের পর বেলা ১১টার দিকে আনসার সদস্যরা জানায় আজ আর পরীক্ষা হবে না। এসময় লাইনে দাড়িয়ে থাকা একজনের সাথে আনসার সদস্যের তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে আনসার সদস্য তার গায়ে হাত তুললে হাতাহাতি শুরু হয়। ওই ঘটনার ছবি তোলার সময় নারী সাংবাদিকসহ দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয় আনসার সদস্যরা।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী শাওন হোসেন মুগদা মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, তার মা ক্যান্সারের রোগী। কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না তার প্রতিবেদন লাগে। গত ২০ জুন তিনি মায়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে যান।তবে প্রতিবেদন না পাওয়ায় দুইবার নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে অভিযোগ জানান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আবার পরীক্ষার জন্য বলেন। সেজন্য শুক্রবার আবার পরীক্ষার জন্য মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
মাকে নিয়ে ভোর ৫টায় এসে লাইনে দাঁড়ানোর পরেও তাদের সিরিয়াল হয় ৩৬ নম্বরে। সেখানে দুটো লাইন হয় একটি বিনামূল্যে বুথে নমুনা দেওয়া, অপরটি ২০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর। হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্যই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাওনের মা।
শাওন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জনের পরীক্ষা করার কথা, কিন্তু আমার মায়ের সিরিয়াল ছিল ৩৬ নম্বর। ৩৩ নম্বর সিরিয়াল চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করে আনসার সদস্যরা এসে বলে, আজ আর হবে না। এরপরে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা (আনসার) বলে, ৪০ জন হয়ে গেছে। তাই আর হবে না।
তখন আমি প্রতিবাদ করলে আনসার সদস্যরা আমাকে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে পাশে আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। আমাকে দুটি চড়ও মারে এবং গালাগাল করে।
এদিকে শাওনকে ধরে ক্যাম্পে নেওয়ার সময় দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী জয়ীতা রায় এগিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা তাদের উপরও চড়াও হয়।
জয়ীতা বলেন, একটি ছেলের সাখে আনসার সদস্যদের তর্কাতর্কি হচ্ছে দেখে এগিয়ে যাই এবং ছবি তোলার চেষ্টা করি। এ সময় আনসার সদস্যরা আমার উপর এবং আমার সাথে থাকা রুবেলের উপর চড়াও হয়।
কিছুটা সরে না আসলে আমার শারীরিক ও ক্যামেরার ক্ষতি হত। তবে সাথে থাকা সহকর্মী রুবেলেরে ক্যামেরায় লেগে লেন্সের ফিল্টার ভেঙ্গে গেছে। এ সময় আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের সম্পর্কে খারাপ ভাষায় গালাগাল দেওয়ার পাশাপাশি দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন জয়ীতা।
এ ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা সম্পৃক্ত হয়ে তাকে আক্রমণের প্রতিকার না করে ওই আনসার সদস্যদের পক্ষ নেন বলে অভিযোগ করেছেন শাওন।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে ক্যাম্পে নেওয়ার পর আটকে রেখে পুলিশ ডেকে আনে। সেখানে যে পুলিশ সদস্য গিয়েছিলেন তাকে পুরো বিষয়টি বলার পরেও তিনি আনসার সদস্যদের পক্ষ নিয়ে আমাকে দোষারোপ করেন।
ওই পুলিশ সদস্য তার নাম-ঠিকানা লিখে নেন এবং ঘটনা সম্পর্কে সংবাদিকদের কাছে কিছু না বলার জন্য তাকে ‘শাসিয়ে যান’ বলে জানান শাওন। এরপরেও আমার মায়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, এই ঘটনায় একজন ফটো সাংবাদিক থানায় একটি জিডি করেছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু যে ছেলেটাকে নিয়ে এত ঘটনা সেই ছেলের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি।
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com