'বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন' বলাতেই

‘কুত্তার বাচ্চা বলে’ মেজর সিনহার বুকে গুলি করে ইন্সপেক্টর লিয়াকত

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২০
print news

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকেই চিহ্নিত করছে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী৷

যদিও, ঘটনাটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলীকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধিকে নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে।

লোকজনের দেওয়া খবর অনুযায়ী টেকনাফ থেকে কক্সবাজারমুখী একটি প্রাইভেটকারের আরোহীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি চালান। পুলিশের দাবি, ওই সেনা কর্মকর্তা নিজের পিস্তল বের করে পুলিশের দিকে তাক করেছিলেন। ঘটনার পর পরই কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা গুলিবিদ্ধ মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল ঘটনা তদন্তে যায়। এসময় এলাকার লোকজন সেনাবাহিনীর তদন্ত দলটিকে দেখে নিজেরাই এগিয়ে আসেন। স্থানীয়দের কাছে তদন্ত দলের কর্মকর্তারা শুক্রবার রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের বক্তব্যে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠে।

 

এসময় স্থানীয় একটি হেফজখানার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও দুজন হাফেজ সেনা কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেট কারে থাকা ব্যক্তিকে সরাসরি গুলি করেই হত্যা করা হয়েছে। তারা জানান, প্রাইভেট কারের ওই আরোহীকে (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের ওপরে দুই হাত তুলতে বলেন৷ সেই কথামতন তিনি দুইহাত তুলে, ‘বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন।’

সাক্ষীরা জানান, মেজর সিনহা এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই কুত্তার বাচ্চা বলেই চিৎকার দিয়ে ওঠে ইন্সপেক্টর লিয়াকত। এসময় খুব কাছ থেকেই তিনি মেজর সিনহার বুকে গুলি চালালে তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্থানীয় শামলাপুর বাজারের আবদুল হামিদ নামের একজন ফেরিওয়ালা সেনা দলের কর্মকর্তাদের বলেছেন, আমাকে যেখানেই নিয়ে যান আমি সত্য কথা বলব। পুলিশ ক্রস ফায়ারের মতো করে একজন জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, গাড়ি থেকে নামার পর পরই পুলিশ ইন্সপেক্টর গাড়ির আরোহীকে (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালিয়ে দেয়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন শনিবার (১আগস্ট) সকালে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ঈদের সময় দেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সতর্ক বার্তা রয়েছে। এ নিয়ে বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে জেলা পুলিশ। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এক প্রকার রেড এলার্টে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনই সময়ে শুক্রবার রাতে শাপলাপুরের একটি পাহাড় থেকে নেমে আসা বোরকা সদৃশ বস্তু পরিহিত লোকজনের খবর শুনে পুলিশ হয়তোবা ডাকাত নতুবা জঙ্গি সন্দেহ করে ওই গাড়িটিকে টার্গেট করে আসছিল।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তিনি কক্সবাজারের হিমছড়ি মেরিন ড্রাইভের একটি হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

তারা একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করছিলেন বলে জানতে পারেন পুলিশ সুপার। তল্লাশি চালিয়ে ৫০ পিস ইয়াবা মিলেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। আহত অবস্থায় তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এদিকে, ঘটনাটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলীকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির একজন প্রতিনিধি সহকারে এ কমিটি গঠন করা


কালেরকন্ঠ