করোনা রোগীরা ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছে বেশি
চট্টগ্রামের করোনা হাসপাতালগুলো এখন প্রায় রোগীশূন্য!
Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
চট্টগ্রামে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হাসপাতালের অনেকগুলোই কোরবানি ঈদের পর থেকে অনেকটা রোগীশূন্য। এর মধ্যে অন্তত তিনটি হাসপাতালে এই মুহূর্তে কোনো রোগী নেই। তিনটি হাসপাতালে ৬ থেকে ৮ জন করে রোগী আছে। বেসরকারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে করোনা আইসোলেশন সেন্টারেই খানিকটা বেশি— মাত্র ২৪ জন রোগী ভর্তি আছে গতকাল রাত পর্যন্ত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে মাত্র কিছুদিন আগে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব থাকলেও চট্টগ্রামের প্রধান এই দুই হাসপাতালেই রোগী সংখ্যা এখন একশতের নিচেই।
চট্টগ্রামে ৯টি হাসপাতালে ৭৮২টি বেড রয়েছে। সব হাসপাতাল মিলিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় রোগী ভর্তি হয়েছে মাত্র ২৭ জন।
এই চিত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে— এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। মূলত করোনা রোগীদের মধ্যে ঘরে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সেখানে অনেকে সুস্থও হচ্ছেন। এ কারণে হাসপাতালের ওপর চাপ কমেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন করোনা রোগীরা এ রোগকে স্বাভাবিক রোগ মনে করে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছে। এটি রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ফল।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার জন্য নয়টি হাসপাতাল আইসোলেশন সেন্টার চালু করে রোগী ভর্তি শুরু করে। কিন্তু হাসপাতালগুলোর অনেকগুলোতেই কিছু দিন যেতে না যেতেই রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। অথচ চট্টগ্রামে করোনা রোগী বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণ রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রামের নামিদামি হাসপাতাল থেকে করোনাসন্দেহে ভর্তি না নিয়ে সাধারণ রোগীদেরও তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এসব ঘটনার মাস পার হতে না হতেই করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রীতিমতো রোগীর হাহাকার চলছে।
বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে (ইউএসটিসি) ৮ জন, করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ২৪ জন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৬ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৬ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। ফৌজদারহাটের করোনা ফিল্ড হাসপাতাল এবং রেলওয়ে হাসপাতালে এই মুহূর্তে কোনো রোগী নেই বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোভিড আইসোলেশান সেন্টার শুরু থেকেই প্রায় খালি ছিল। বর্তমানেও সেখানে কোনো রোগী নেই।
অন্যদিকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৫ জন, জেনারেল হাসপাতালে ৯৬ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৬ জন রোগী ভর্তি আছে।
দেশে করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চট্টগ্রামে। নাভানা গ্রুপের সহযোগিতায় ফৌজদারহাটের সলিমপুরে ৬০ শয্যা নিয়ে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে রোগী ভর্তি হলেও এখন সেই করোনা ফিল্ড হাসপাতাল রোগীশূন্য। গত কিছুদিন ধরে রীতিমতো অলস দিন পার করছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৬০০ করোনা রোগী। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।
ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এ হাসপাতালে প্রচুর রোগী ছিল। তবে এখন করোনা রোগীদের মধ্যে ঘরে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে সুস্থও হচ্ছেন। এটা অবশ্যই ভালো দিক বলতে হবে।’
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘একসময় এ হাসপাতালে ৪০ জন জনবল ছিল। এর মধ্যে ৩৬ জন ছিলেন ডাক্তার। এখানে ৪ জন সরকারি ডাক্তারকেও পদায়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে ১০ জন ডাক্তার রয়েছেন। তবে রোগী নেই।’
রোগী ভর্তি না থাকাটা পজিটিভ দিক— এমন মন্তব্য করে বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘এখন করোনা রোগীরা এ রোগকে স্বাভাবিক রোগ মনে করে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছে। এটি রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ফল। এক সময় যে আতঙ্ক ছিল এখন সেটি নেই। ঘরে চিকিৎসা নিয়েও মানুষ সুস্থ হচ্ছে। সুতরাং জরুরি না হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই।’
তবে ফিল্ড হাসপাতালকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালিয়ে নেবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার চিকিৎসা যেভাবে চালানো হয়েছে, সেভাবে সাধারণ চিকিৎসাও চালানো হবে এ হাসপাতালে। এজন্য এ হাসপাতালের মালিকপক্ষ নাভানা গ্রুপকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তখন এটি হবে সেবামূলক একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান।’
হাসপাতালে করোনা রোগী কমে যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার জন্য তৈরি করা যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে না, সেগুলো ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলা হবে।’