আজ বিশ্ব যুব দিবস। ১৯৯৮ সাল থেকে সারাবিশ্বে যুবকদের ভূমিকা কে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বর্তমান বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যাই তরুণ। প্রায় ২০০ কোটি তরুণ সারাবিশ্বে বর্তমানে রয়েছে।
এ যুবকরা বর্তমান বিশ্বের প্রধান চালিকা শক্তি। এ যুবকদের ওপর ভর করে চলছে বিশ্বসভ্যতা। সারাবিশ্বের শ্রমশক্তির প্রায় ৭০ ভাগই তরুণ।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া তরুণদের জন্য একটি পপুলেশন হটস্পট। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ কোটি তরুণ।
সারাবিশ্বের অন্যসব দেশের মতই বাংলাদেশেও তরুণরা অন্যতম সম্ভাবনাময়ী একটি খাত।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে তরুণদের অফুরন্ত এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর, টেকসই পৃথিবী চালনার ব্যাপারে রাষ্ট্রসমূহ এখনো অভিযাজিত হতে পারেনি। এমনকি তারা তাদের এ মূল্যবান সম্পদকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য চিহ্নিত করতে পারে নি।
জাতিসংঘ বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে এসে তরুণদের নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বরাবরই যৌক্তিক। কিন্তু এ ঘোষণার বাস্তবায়নে রাষ্ট্রসমূহের বিশেষ করে ৩য় বিশ্বের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহের কোন আগ্রহই দেখা যায় না।
সারা পৃথিবীতে আজকের তরুণদের এ মতামতকে অগ্রাহ্য করার কারণে মাদক, বেকারত্ব, হতাশা, নিগ্রহ, আত্মহত্যা, নৈতিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে।
সম্ভাবনার বিকাশের পথ রুদ্ধ হওয়ায় তারা তাদের এ সম্ভাবনাকে বর্তমানে অপপথে খরচ করছে।
এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাপী তারুণ্যের জাগরণ একটি সময়ের দাবী। বেকারত্ব, হতাশা কাটিয়ে ওঠে বিশ্বমানবের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে হলেও আমাদের তরুণদের আত্মসূচনা করা উচিত।
এ সূচনা হবে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের। এখানে বসে থাকার কোন সময় থাকবেনা। অবিরত, অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের করে যাওয়া উচিত। আমাদের একটু একটু কাজ সারাবিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতির মেরুদণ্ড নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে পারত।
চলমান সময়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন, টেকসই উন্নয়ন অতযনৃত গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত বিষয়।
সমসাময়িক কালে এসব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক আমাদের সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সবকটি লক্ষ্যই তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব। জাতিসংঘ এটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে। এখন আমাদের উচিত তারুণের লিসবন ঘোষণা বাস্তবায়ন। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
সমসাময়িককালে তারুণ্যের ভূমিকা বিষয়ে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ অনুকরণযোগ্য।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহে তারুণ্যের স্ফুরণ আগামী দশকসমূহে রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
আমরা এ সময়টিকে কাজে লাগাতে পারি। প্রয়োজনীয় দক্ষতা, অধিকতর অর্থনৈতিক সুযোগ, মৌল মানবিক শিক্ষা, রাজনৈতিক সচেতনতা আমাদের তারুণ্য ও দেশের এমনকি বিশ্বব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে।
রাষ্ট্রনেতাগণ ও নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টি বুঝে তাদের মতামতকে গ্রাহ্য ও আমল করে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন হবে সঠিক ও উপযোগী সিদ্ধান্ত। সকল কাজে তাদের মতামত, অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অবদান আগামীর টেকসই পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রগুলো এটি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে, তত ভাল হবে। সুতরাং দেরি হওয়ার আগে কাজ শুরু করুণ।
তরুণদের ও মনে করে দিতে চাই। শুধু টানলে বা ঠেলেলে ওঠা যাবে না। ওঠার চেষ্টাও করতে হবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ভাষায়-
"আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে।
তোমার ছেলে উঠলে গো 'মা', রাত পোহাবে তবে।"
তাই
জেগে ওঠুন হে তরুণ, জেগে ওঠুন।
সময় এখন আমাদের।
লেটস এনগেজ ফর গ্লোবাল এ্যাকশন।
লেখকঃ মোঃ ইলিয়াছ মিয়া
পরিবেশকর্মী
প্রধান নির্বাহী, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম - সিইএইচআরডিএফ
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com