রোহিঙ্গা সহায়তা প্রকল্প: পরামর্শক খাতেই খরচ ২৪ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২০

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণ ও যুবকদের উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে হাতে নেওয়া রোহিঙ্গা সহায়তা প্রকল্পের পরামর্শক খরচ বাড়ছে। ১০ জন পরামর্শক ও চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় ধরা হচ্ছে ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে এ বাবদ ব্যয় ছিল ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এখন ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবেও ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক বাড়তি অনুদান দেওয়ায় কাজ বাড়ছে প্রকল্পটির। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, গত ৭ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। তাছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এমটিবিএফ বরাদ্দের আওতায় প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, মূল অনুমোদিত প্রকল্পটিতে ১০ জন পরামর্শকের জন্য ১০ কোটি ৪৯ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এখন পরামর্শকের সংখ্যা ঠিক থাকলেও তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে এ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া ৪টি পরামর্শক ফার্মের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এখন ২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ কোটি ৭ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরি এ মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটি চলমান প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন কম্পোনেন্টের জন্য পরামর্শক প্রয়োজন। তাছাড়া সাইক্লোন সেল্টার তৈরি, পাহাড়গুলো রক্ষা ইত্যাদি কাজের জন্য স্ট্রাকচারাল ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো অবকাঠামোগত কাজ করতে গেলে গবেষণাও প্রয়োজন হয়। তাই পরামর্শকের দরকার রয়েছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি মোট ব্যয় ছিল ৩৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এখন ২৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা বড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত। এখন ২২ মাস বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম সহিংসতা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আনুমানিক সাত লাখ মানুষকে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলায় অনুপ্রবেশে বাধ্য করেছে। উখিয়া ও টেকনাফ এ দুটি উপজেলায় যেখানে বেশিরভাগ ডিআরপি বসতি স্থাপন করেছে। তরুণ ও যুবকদের কোনো উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত না করতে পারলে বিভিন্ন বিপথগামী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এদেশের মানুষকে কলুষিত করতে পারে। এ জন্য ডিআরপিদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিদ্যমান সেবাগুলোর মান উন্নীতকরণ ও ক্যাম্পের জনগণের রিজিলেন্স বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের অনুদান সহায়তায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

মূল অনুমোদিত প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। মূল প্রকল্পের অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের সাথে ২০১৯ সালের ৮ মে ৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার অনুদান চুক্তি সই হয়।

প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ওর্য়াকফেয়ার এবং কমিউনিটি সার্ভিস কার্যক্রমের মাধ্যমে সেবার কভারেজ বাড়ানোর জন্য ২ এপ্রিল অতিরিক্ত ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার অনুদান প্রদানে সম্মতি দেয় বিশ্বব্যাংক। অতিরিক্ত এই অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত, কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার ও সার্ভিস কার্যক্রমের কলেবর বাড়ানোসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় এবং বাস্তবায়ন বৃদ্ধি করে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- শ্রমঘন পূর্ত কাজের জন্য জনদিবসভিত্তিক শ্রমের ব্যবস্থা করা (বছরে জনপ্রতি ৯০ দিন)। এছাড়া ভূমিক্ষয় রোধে ক্যাম্পের জমিতে দেশি জাতীয় ঘাস রোপন ও সংরক্ষণ, ভূমিধ্বস, বন্যা ও ভূমিক্ষয় প্রতিরোধের স্বার্থে ক্যাম্পের ঢালু জমির ঢাল রক্ষণাবেক্ষণ, পায়ে চলার পথে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, পুনর্বাসন ও সংরক্ষণ, ক্যাম্প এলাকার পানি নিষ্কাশন, নারীদের জন্য শ্রমদিবসের ব্যবস্থা করা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কাজসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।


সারাবাংলা