স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

হত্যা মামলা করতে যাচ্ছে মেজর সিনহা পরিবার

প্রকাশিত: ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২০
নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে তাঁর পরিবার। এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়া মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যুকে নির্মম হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে আজ বুধবার সকালে সদস্যদের মতবিনিময়সভা ডেকেছে। রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান গত ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। টেকনাফের শামলাপুর অঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় ডকুমেন্টারি ফিল্মের শুটিং শেষে তিনি নিজ গাড়িতে সঙ্গীসহ পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় এই ঘটনা ঘটে।

নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। ঘটনাস্থল এলাকাতেই মামলাটি দায়ের করা হবে।’

সরকারের একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাঁকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন। লিয়াকত কোনো কথাবার্তা না বলেই মেজর (অব.) সিনহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।

রাজধানীর সামরিক কবরস্থানে গত সোমবার সামরিক মর্যাদায় সিনহার দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনার পরপরই বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সব কর্মকর্তা ও সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তা পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ও অপারেশন) মো. জাকির হোসেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলী ও রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রতিনিধি লে. কর্নেল সাজ্জাদ। কমিটি গতকালই কাজ শুরু করেছে।

মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্য ছিলেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব প্রয়াত মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন।

জানা যায়, মেজর (অব.) সিনহা ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরির জন্য গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যান। তাঁর সঙ্গে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীও যান। তাঁরা প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং সম্পন্ন করেন। গত ৩১ জুলাই সঙ্গী ক্যামেরাম্যান সিফাতকে নিয়ে তিনি শামলাপুর অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় যান। ওই সময় সিনহা রাশেদ ফুলহাতা কম্ব্যাট গেঞ্জি, কম্ব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট পরিহিত ছিলেন। শুটিং শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁরা দুজন পাহাড় থেকে নামার সময় দু-তিনজন স্থানীয় ব্যক্তি তাঁদের দেখে ডাকাত সন্দেহে পুলিশকে অবহিত করে।

জানা যায়, সিফাতকে নিয়ে মেজর (অব.) সিনহা পাহাড় থেকে নেমে নিজস্ব প্রাইভেট কারযোগে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। শামলাপুরের পূর্বে বিজিবি চেকপোস্টে তাঁদের তল্লাশি করার জন্য থামানো হয় এবং পরিচয়প্রাপ্তির পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে ডাকাত আসছে খবর পেয়ে এসআই লিয়াকত ফোর্স নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। রাত ৯টার দিকে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে আসার পর তিনি সিনহার গাড়ি থামান। মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থামিয়ে পরিচয় দিলে প্রথমে তাঁদের গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দিকে যান। মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত তাঁকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন।

দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা যায়, লিয়াকত কোনো কথাবার্তা না বলে গাড়ি থেকে নামার পরপরই মেজর (অব.) সিনহাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং সিফাতকে আটক করে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যান।

এই হত্যাকাণ্ডের পর গত শনিবার বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি তদন্তদল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় স্থানীয় লামারবাজার মসজিদ ও হেফজখানার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও দুজন হাফেজ বলেন, ‘এটি ছিল একটি নির্মম ঘটনা। মেজর (অব.) সিনহাকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই পরিদর্শক লিয়াকত অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে তাঁর বুকে গুলি চালিয়ে দেন।’

এদিকে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে গত ৩১ জুলাই রাতে সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছেন। একটি মামলায় পুলিশের সঙ্গে নিহত মেজর (অব.) সিনহা ও তাঁর সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের কথিত বন্দুকযুদ্ধের বিবরণ রয়েছে। বলা হয়েছে, সেই বন্দুকযুদ্ধেই মেজর (অব.) সিনহা নিহত হন। মামলার একমাত্র আসামি সিফাত। মামলায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতসহ তাঁর সদস্যদের সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ অ্যাসল্টেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।

অপর মামলাটিতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা উল্লেখ করে ৫০ পিস ইয়াবা ও বেশ কিছু পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার দেখানো হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।