বৈশ্চিক মহামারি কোভিড-১৯-এর কারণে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বেশি।
যেটার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে প্রায় প্রতিটি সেক্টর। যেমন- যানবাহন থেকে শুরু করে খাবার-দাবার পর্যন্ত। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লকডাউনের আওতাভুক্ত করে, কোভিড-১৯মোকাবিলায় পর্যটন শিল্পের যেন দুরব¯’্।া পর্যটন স্থানগুলোতে যেমন নেই ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা, তেমন নেই অর্থনীতির উন্নয়নের ধারা। দীর্ঘ ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে ছিল না মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবসা। ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুরিস্ট গাইডিং, হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স, ট্যুরিস্ট কোচ, ট্যুরিস্টশিপ এজেন্সি,ট্যুরিস্ট গাইডিং এজেন্সি, স্ট্রিট ফুড, কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের হোম-স্টে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখেরও অধিক মানুষ জড়িত। তাঁরা আজ কর্মহীনতায় ভুগছে।
ফলশ্রুতিতে, তাদের অধিকাংশের পরিবারের নিত্যদিনের মৌলিক চাহিদা মেটাতেও চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখেরও অধিক মানুষ ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এহেন, দূর্বিষহ
পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক ও সংশ্লিষ্ট মহল যথাযথ ব্যব¯’া না নিলে দেশে একটি বিশাল অংশ বেকারত্বে প্রভাব ফেলবে, ফলে দেশে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে। চলমান সৃষ্ট সংকটের কারণে
এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ধারণা করা যায়। ২০২০সালে আন্তর্জাতিক
পর্যটকদের সংখ্যা ২০-৩০ শতাংশ কমে যাবে। ক্ষতি হবে প্রায় ৩০০-৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ পর্যটকদের মন কেড়েছে বহু আগে থেকেই। বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত রয়েছে পর্যটন রাজধানী নামে খ্যাত কক্সবাজারে, যা ভ্রমণপিপাসুদের মনের খোরাক মেটায়। মানসিক
অবসাদ দূর করে। অবসর সময়ে সুন্দর মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে ছুটে আসে শহরের যানজটমুক্ত পরিবেশে। এমন স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন- কক্সবাজার, বান্দরবান, সাজেক ভ্যালি, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি-ইনানি,মহেশখালী-কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, সিলেট ও সুন্দরবনে সারাবছর’ই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। কিন্তু এখন করোনার কারণে পর্যটক নেই বললে চলে। আর্থিক সংকটে ভুগছে সেখানকার মানুষ। ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। তবে, প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার অনুযায়ী জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টার্নওভার করবে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পর্যটন শিল্প বিকল্পহীন। ছোট-বড় সকল সেক্টর সক্রিয় হবে।
বিশাল সংখ্যক পর্যটন খাতে সংশ্লিষ্ট জনগণের জীবিকা-নির্বাহ সহজ হবে। পর্যটন এলাকাগুলোতে অনেক সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকে, যেমন- ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে থাকে। যা পর্যটকদের স্মৃতির পাতায় অন্ধকারাছন্ন একবিশাল অধ্যায় হয়ে থাকে। বর্তমানে পর্যটন শিল্প খোলে দিলেও পর্যটকদের তেমন আনাগোনা নেই, তাই অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিয়ে পর্যটকদের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কর্মী ছাটায় না করে, কর্মস্থলে কাজের সময় কমিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করার চেষ্টা করতে হবে।
সরকার কতৃর্ক বা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে ক্ষতি পুষিয়ে আনতে। অন্যতাই
পর্যটন শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে। সকল খাতে স্বল্প মুনাফায়
লোনের ব্যবসা করা অনস্বীকার্য। সতর্কতার সাথে সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে।
মাস্ক পরিধান অনেকটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্ব্যস্থবিধি না মানলে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। পরিশেষে বলবো, দেশে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বিশাল সংখ্যক জনগণের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে জোর দিতে হবে।
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com