বাংলাদেশে আইসিসির আদালতের আবেদন ‘উস্কানিমূলক’ নিচ্ছে মিয়ানমার’

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

তানভিরুল মিরাজ রিপন | কক্সবাজার

‘বাংলাদেশে আইসিসির আদালত স্থাপনের আবেদন জানানো হয়েছে। এটাকে মিয়ানমার উস্কানিমূলকভাবে নিচ্ছে। তাই সেনা টহল বাড়িয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফরিদুল আলম।

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা টহল বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তেজনা বিরাজ করে। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ফরিদুল আলম ভয়েসওয়ার্ল্ডকে এ মন্তব্য করেছেন। তিনি এই টহলকে বাংলাদেশকে মিয়ানমার মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।

ফরিদুল আলম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফরিদুল আলম ভয়েসওয়ার্ল্ডকে জানান, যখনই প্রত্যাবাসনের কোনো ইস্যু বা তারিখ নির্ধারণ হয়, তখনই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংঘাতে জড়িয়ে শিবিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এবার আইসিসির আদালত বাংলাদেশে স্থাপনের আবেদন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে মিয়ানমার।

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আকস্মিক টহল ও সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সেনাবাহিনীর টহলকাজে সিভিল বাহন অর্থাৎ মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। এটিকে সন্দেহজনক মনে করছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিয়ানমার সীমান্তের কা নিউন ছুয়া, মিন গালারগি ও গার খুইয়া এ তিনটি অঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী টহল বাড়িয়েছে। এসব অঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর টহলে আতংক বিরাজ করতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এতে আতংক সৃষ্টি হলে আবারও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা সীমান্তে জড়ো হওয়ার আশংকা থাকতে পারে।

মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন আগামী নভেম্বরে। তা নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্যে আবারও সক্রিয় হামলা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা গ্রাম গুলোতে। খুন, ধর্ষণ ও ঘর পুড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখে মিয়ানমারের বৌদ্ধদের ভোট ব্যাংককে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চায়। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর নাম মিয়ানমারের মানচিত্র থেকে মুছে দিয়েছে দেশটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের মন জয়ের লক্ষ্যে এগুচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

হঠাৎ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্তে অবস্থানসহ সমাবেশের কারণ কি? কোনো সংঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে এই টহল? সেই বিষয়টি অসমর্থিত বলে ভয়েসওয়ার্ল্ডকে জানিয়েছেন নৃবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দীন।

অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দীন ভয়েসওয়ার্ল্ডকে বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সীমান্ত সমাবেশের কারণ হতে পারে, যে দু’জন মিয়ানমার আর্মি সদস্যের রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ে জবানবন্দি জনসম্মুখে এসেছে তারা যেনো কোনোভাবে মিয়ানমার থেকে বের হতে না পেরে। তার জন্য হতে পারে এই টহল।

ড. রাহমান নাসির উদ্দীন আরেকটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ওই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আরকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি সংঘাত চলছে। যা মিয়ানমার প্রকাশ করতে চায় না। আরকান আর্মির অনেক সদস্য আবার রোহিঙ্গাদের গ্রামে অবস্থান করছে বলে ধারণা মিয়ানমার আর্মির। সেটিও একটি কারণ হতে পারে।

মিয়ানমারের মদদে সক্রিয় হচ্ছে সন্ত্রাসী গ্রুপ?

মিয়ানমার সেনাবাহিনী হঠাৎ সীমান্তের টহলে মাছ ধরার নৌকা (সিভিল বাহন) ব্যবহার করেছেন বলে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
টহলে সিভিল বাহন ব্যবহারে ‘রোহিঙ্গা শিবিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’ গ্রুপের সাথে যোগসূত্র খুঁজছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে ভয়েসওয়ার্ল্ডের সাথে কথা বলেছেন ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) এর কমান্ডিং অফিসার মো. হেমায়েতুল ইসলাম।

তিনি ভয়েসওয়ার্ল্ডকে বলেন, আমরা নিশ্চিত নয়, তবে মিয়ানমার আর্মির মদদপুষ্ট হয়ে ‘নবী হোসেন গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গোর্ষ্ঠি আবারও সক্রিয় হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী টহলের ক্ষেত্রে সিভিল বাহন ব্যবহারের পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে মো. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা নষ্ট ও প্রত্যাবাসনে বাঁধা সৃষ্টি করতে মিয়ানমার আর্মি রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপকে মদদ দিচ্ছে। আর্মি সিভিল নৌকা ব্যবহার করার অর্থ হতে পারে তারা নৌকার মাঝিদের সাথে একটি যোগাযোগ তৈরী করতে চাইছে, যাতে করে সহজে তাদের মদদপুষ্ট গ্রুপগুলোকে সহায়তা করতে পারে।

১৬ এপিবিএন এর কমান্ডিং অফিসার বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে ধারণা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে মিয়ানমার মদদ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।

ইতোমধ্যে কয়েকবার আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসনের আয়োজন করলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ রাজি হয়নি মিয়ানমারে ফেরত যেতে। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। রাত নামলেই যেনো রোহিঙ্গা শিবিরে অস্ত্রের মহড়া চলে।

শুধু মহড়াতেই শেষ নয় স্থানীয়দের মধ্যেও রোহিঙ্গারা এখন আতংক সৃষ্টি করতে সক্ষম। দিনে দুপুরে ছিনতাই, রাতে অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবি এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ক্যাম্পে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের শক্তহাতে দমন করতে প্রত্যেক দিন অভিযান চালাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে।

সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শনে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে যাওয়ার আগেও রোহিঙ্গা শিবিরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে থমথমে অবস্থা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিল। তবে তা নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদুল আলম তার গবেষণার সূত্রধরে ভয়েসওয়ার্ল্ডকে বলেন, যখনই প্রত্যাবাসনের কোনো ইস্যু বা তারিখ নির্ধারণ হয়, তখনই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংঘাতে জড়িয়ে শিবিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এতে করে গ্রুপের বাইরের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আতংক সৃষ্টি হয়।

ফরিদুল আলমের একটি গবেষণায় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কথা ওঠে এসেছে। সে গবেষণায় দাবী করা হয়, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে ৩৭টিরও বেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে কাজ করে।

রোহিঙ্গারা কিছু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য সব সিন্ডিকেট স্থানীয় ও রোহিঙ্গারাসহ নিয়ন্ত্রণ করে। অথবা ইউজ হয় রোহিঙ্গারা। সেখানে অস্ত্র, মাদক, তেল (ডিজেল-সয়াবিন) এসবের চোরা চালান করে। সেক্ষেত্রে নবী হোসেন গ্রুপ সীমান্তে সক্রিয় হওয়ার সাথে আমার মনে হয় না মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কোনো যোগসাজশ আছে। তবে মিয়ানমারের সক্রিয় মদদে রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু মিয়ানমারের এজেন্ট কাজ করে। দাবী করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফরিদুল আলম।

আরসা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক ও নৃ-বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন ভয়েসওয়ার্ল্ডকে বলেন, আমরা শোনে থাকি ‘আরসার’ নেতৃত্বে থাকা আতাউল্লাহকে অর্থায়ন করছে সৌদিআরবে অবস্থান করা ২০ জন ব্যক্তি। তবে তারা রোহিঙ্গা নাকি সৌদি নাগরিক তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নবী হোসেন গ্রুপ সক্রিয় হওয়ার সাথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সীমান্তে টহলের কোন সম্পর্ক আমার মনে হয় নেই।