ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ধুর সঙ্গে খাবার-দাবার নিয়ে আলাপ করলেন। একটু পর নিউজ ফিডে মিক্সড বাদামের বিজ্ঞাপন। তারপর স্ক্রল করতেই একের পর এক ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোভনীয় সব অফার। প্রযুক্তি আপনাকে নিজের মতো করে চিন্তা করার সময়ও দেবে না যেন। আপনাকে তারা আপনার চেয়েও বেশি চেনে!
এসব কীভাবে জানে ফেসবুক? তাদের আছে শক্তিশালী এআই ওরফে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই এআই সিস্টেম আপনার খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পছন্দের কাপড়, রেস্তোরাঁ, ওয়েবসাইট, শখ; সবই জেনে বসে আছে। একই কাজ করে গুগল ও তার যাবতীয় অ্যাপগুলোও।
ফেসবুকে আইডি খোলার পর থেকে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ। আমরা ফেসবুকের কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করি, কোন ধরনের ইভেন্টে আমন্ত্রণ পাই, আমাদের বন্ধু তালিকায় কারা, ইনবক্সে কে কী লিখলো, আমরা কাদের ফলো করি, মেসেঞ্জারে কী নিয়ে বেশি কথা বলি, এসব তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে ফেসবুক।
জিপিএস সিস্টেম বন্ধ থাকলেও চলতে থাকে ট্র্যাকিং। একবার মার্কিন সিনেটর জোশ হাওলি ও ক্রিস্টোফার এ কুনসের এক চিঠির জবাবে ফেসবুক জানায়, লোকেশন, বিজ্ঞাপন, ডেটা, নিউজ ফিড এবং সেফটি চেকসহ বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে জিপিএস ব্যবহার করা হয়। পরে ওই চিঠির কপি টুইটারে ফাঁস করে দেন জোশ হাওলি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও কদিন আগে ফেসবুককে ৬১ লাখ ডলার জরিমানা করেছিল। অভিযোগ ছিল, ফেসবুক দেশটির ৩৩ লাখ নাগরিকের তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিল ‘বিশ্লেষণ’ করার জন্য।
গুগলও সবসময় লক্ষ রাখে আপনি ইন্টারনেটে কী করছেন, কোন সাইটে ঢু মারছেন। এসবের ওপর ভিত্তি করে গুগল আপনার জন্য ‘প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইটিকস’ এর সাহায্যে একটি কাস্টমাইজড সার্চ ডেটাবেজ তৈরি করে ফেলে। মানে আপনি কিছু লিখে সার্চ করলে গুগল আপনাকে যেভাবে চিনেছে সেভাবেই সার্চ রেজাল্ট দেখাবে। এতে হয়তো দরকারি জিনিসটা আপনি নাও পেতে পারেন।
তবে এ ট্র্যাকিংয়ে ফেসবুক এক কাঠি বেশি সরেস। মেসেঞ্জারের অডিও আলাপনেও আড়ি পাতে সে। মেসেঞ্জারে আমরা কী বলছি না বলছি সেটা বুঝে সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করে। এ কাজে আমাদের ইনবক্সের এসএমএসও কপি করে নেয় ফেসবুক। এই সব কথোপকথন ও এসএমএসের মাধ্যমে ফেসবুক বুঝে নেয় কার ‘ইন্টারেস্ট’ কীসে। বিষয়টি জনসমক্ষে প্রায় আড়াই বছর আগেই।
২০১৮ সালের মার্চে ফেসবুক এ নিয়ে বলেছিল, তারা ব্যবহারকারীর উপকারের কথা ভেবেই নাকি এমনটা করে। আগামী বছর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এমন খবরও জানায় যে, ফেসবুক আপনার মেসেঞ্জারের অডিও চ্যাটগুলোও নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করে। পরে অবশ্য আরও অনেক অন্যান্য এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ ওঠে। অ্যামাজনের অ্যালেক্স, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাপলের সিরি- কান পাতার অভ্যাস আছে এদেরও।
আপাতত নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ফেসবুকের সেটিংসের একটি অপশনের সাহায্য নিতে পারেন। সেখানে আছে ‘ইওর ফেসবুক ইনফরমেশন’। এই পেজে গেলে আমাদের সব ডাটা দেখা যায় এবং ডাউনলোড করা যায়। এখানে ক্যাটাগরি করে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া আছে। যেমন- ফেসবুক পোস্ট, কমেন্ট, লাইক ইত্যাদিসহ আরও নানা তথ্য দেওয়া আছে। আমরা চাইলে এসব তথ্য ‘অফ’ রাখতে পারি। ফেসবুকের মতো গুগলেও এই তথ্যগুলো আছে। গুগলের সেটিংসে গিয়ে ডাটা অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন অপশনে গেলে বিভিন্ন তথ্য দেখা যাবে। আপনার সার্চ, লোকেশন হিস্ট্রি-এসব ডাটা দেখা যাবে। এসবও চাইলে বন্ধ রাখা যায়।
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com