সেন্টমার্টিন্সে পর্যটনের বিধি-নিষেধে নাখোশ ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২১

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

সুজাউদ্দিন রুবেল|
সেন্টমার্টিন্সে এখন থেকে আতশবাজি, বারবিকিউ পার্টি বা ঊচ্চ শব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধসহ পর্যটকদের মানতে হবে ১৪ নিদের্শনা। তা ভাঙলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে ছেঁড়াদ্বীপেও। আর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে কোস্টগার্ড। এই বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্তে নাখোশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সেন্টমার্টিনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সব নাগরিককে বিধি-নিষেধ মেনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন্স। যার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর ছুটে যায় হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতে প্রবাল দ্বীপের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

তাই সেন্টমার্টিন্সে ভ্রমণে নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। দ্বীপটিকে ‘প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন’ এলাকা ঘোষণা করে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে পরিবেশ অধিদফতর বলেছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ এবং প্রতিবেশ বিরোধী আচরণের কারণে বিরল প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
তবে এই বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্তে নাখোশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখানকার স্টেট হোল্ডার, এখানকার যারা নিয়ন্ত্রক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এ কারণে জারিকৃত বিধি নিষেধের পুরোপুরি বিরোধিতা না করলেও আংশিক করছি।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন পরিবেশবাদীরা। বিধি-নিষেধগুলো সমন্বয় করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার দাবি তাদের।

কক্সবাজারের বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, এর আগের কিন্তু অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এবার আশা করবো এগুলো যেন বাস্তবায়ন করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, সেন্টমার্টিনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সকল নাগরিককে বিধি-নিষেধ মেনে সহযোগিতা করা উচিত।
পর্যটনের ভরা মৌসুমে ৫ মাস পর্যটকে মুখর থাকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন্স। প্রতিদিন কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ৭টি জাহাজে করে যাতায়াত করেন ৫ হাজারের বেশি পর্যটক।
পর্যটকদের জন্য ১৪ ধরনের বিধিনিষেধ :
১. দ্বীপের সৈকতে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না।
২. দ্বীপের সৈকত, সমুদ্র এবং নাফ নদীতে প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না।
৩. পশ্চিম দিকের সৈকতে কোনাপাড়ার পর দক্ষিণ দিকে এবং পূর্ব দিকের সৈকতে গলাচিপার পর দক্ষিণ দিকে যাওয়া যাবে না।
৪. দ্বীপের চারপাশে নৌ-ভ্রমণ করা যাবে না।
৫. জোয়ার-ভাটা এলাকায় পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটা যাবে না।
৬. সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যাবে না।
৭. সৈকতে রাতের বেলা কোনো ধরনের আলো বা আগুন জ্বালানো, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো যাবে না।
৮. সৈকতে মাইক বাজানো, হৈ-চৈ এবং উচ্চস্বরে গান-বাজনা করা কিংবা বার-বি-কিউ পার্টি করা যাবে না।
৯. ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে স্পিডবোট, কান্ট্রি বোট, ট্রলার কিংবা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না।
১০. সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকারের অধিগ্রহণ করা ছেঁড়াদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ করা যাবে না।
১১. প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, তারা মাছ, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক শৈবাল এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
১২. জাহাজ থেকে পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।
১৩. দ্বীপে সুপেয় পানির পরিমাণ সীমিত হওয়ায় পানির অপচয় রোধ করতে হবে।
১৪. সর্বোপরি সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে ভ্রমণকারীসহ সবাইকে।