করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ভয়াবহ ভাবে বিপর্যস্ত ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে একথা জানায় ইসলামাবাদ।
শনিবার রাতে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির চলমান ঢেউ মোকাবিলায় ভারতের জনগণের পাশে থাকতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশটিকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। মহামারির এই পর্যায়ে ভেন্টিলেটর, বাই পাপ, ডিজিটাল এক্স রে মেশিন, পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুয়িপমেন্ট (পিপিই)-সহ অন্যান্য সরঞ্জামদি দিয়ে ভারতকে সহায়তা করতে চায় পাকিস্তান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি নীতিতে বিশ্বাস করি, আর তা হচ্ছে- মানবতাই প্রথম।’
পরে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ভারতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং দেশটির অবস্থা সত্যিকার অর্থেই ‘খুবই উদ্বেগজনক’।
শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, পরে (ভারতের) পরিস্থিতি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং সহায়তা নিয়ে ভারতের দিকে এগিয়ে যেতে তিনি (ইমরান খান) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুমতি দেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি এবং মানবতার কারণে সংকট মোকাবিলায় আমরা সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা সাহায্য করতে পারি এবং করতে ইচ্ছুক। (এই মুহূর্তে ভারতের প্রতি) এটাই আমাদের প্রস্তাব।’
এর আগে ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাশাপাশি এই লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকারও বার্তা দেন তিনি।
শনিবার টুইটারে তিনি বলেন, ‘বিপজ্জনক কোভিড-১৯ ঢেউয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের লড়াইয়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্বজুড়ে আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য আমরা প্রার্থনা জানাই। বিশ্বব্যাপী এই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে মানবতার লড়াইয়ে আমাদের সামিল হতে হবে।’
এছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে থাকা ভারত সরকারকে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ দাতব্য সংস্থা ইদি ফাউন্ডেশন। গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে ইদি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফাইসাল ইদি এই প্রস্তাব দেন।
চিঠিতে নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে ফাইসাল ইদি বলেন, ‘আপনাদের দেশে বর্তমানে মহামারির যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এই পরিস্থিতে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
কী প্রকারে সেই সহযোগিতা হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে ফাইসাল ইদি বলেন, ‘আমরা ৫০ টি অ্যাম্বুলেন্স এবং সেই অনুপাতে স্বাস্থকর্মী ও করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ভারতে পাঠাতে চাই।’
‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই, কারণ ভারতে এখন করোনার যে পরিস্থিতি তা সহ্যের অতীত। পাকিস্তানে আমাদের করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া এবং এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।’
করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ভারত সরকারের অনুমতি ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া ইদি ফাউন্ডেশনের আর কিছু চাওয়ার নেই উল্লেখ করে চিঠিতে ফাইসাল ইদি লেখেন, ‘আমাদের দলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সব ব্যবস্থাই আমরা করব। আমাদের কেবল আপনার অনুমতি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যটুকু প্রয়োজন।’
সম্পাদক: জাহাঙ্গীর আলম
©Vorercoxsbazar.com