বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলংকায় ফুরোনোর পথে টিকার মজুদ

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, মে ২৩, ২০২১
বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলংকায় ফুরোনোর পথে টিকার মজুদ

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়ই করোনা পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। এ শঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে টিকার অপর্যাপ্ততা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশগুলোকে টিকা সরবরাহ করতে পারছে না ভারত। বাংলাদেশে এরই মধ্যে করোনার টিকার মজুদ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নেপাল ও শ্রীলংকায়ও এখন একই পরিস্থিতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য এখন চীন ও রাশিয়ার মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে।

গত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় মারাত্মক আঘাত হেনেছে করোনা মহামারী। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ঘাটতি দেখা দেয়ায় ভারতও টিকা রফতানি বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে টিকার মজুদ প্রায় ফুরিয়ে আসায় বাংলাদেশে গতি হারিয়েছে করোনার টিকাদান কর্মসূচি। নেপাল ও শ্রীলংকায়ও এখন টিকার মজুদ শেষের দিকে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকার চালান পাঠাতে পেরেছে পুনেভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বর্তমানে টিকার জন্য চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এছাড়া পশ্চিমা যেসব দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার অতিরিক্ত টিকার মজুদ থাকতে পারে, সেগুলোর সঙ্গেও সরবরাহ নিয়ে কথা চলছে।

সম্প্রতি দেশে চীনের কাছ থেকে সিনোফার্মের টিকা সংগ্রহে চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়। তবে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশের টিকার বাণিজ্যিক সরবরাহ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অনেকগুলো দেশ এরই মধ্যে এ টিকার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষায় রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেরাম থেকে আসা টিকার মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭টি। এ টিকার মজুদ সপ্তাহ পেরোনোর আগেই ফুরিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজের টিকা নেয়া প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ব্যক্তি দ্বিতীয় ডোজে এ টিকা পাবেন না বলে আশঙ্কা করছে অধিদপ্তর।

এছাড়া সম্প্রতি চীন থেকে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে এসেছে। এর বাইরেও কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে আরো এক লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা শিগগিরই হাতে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে চীন গতকাল আরো ছয় লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মাদ খুরশীদ আলমও বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে দেশে এখন ১০ লাখ ডোজের কাছাকাছি সংখ্যক টিকা রয়েছে।

দেশে এরই মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আট লাখের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ১২ হাজারের কাছাকাছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও সংক্রমণ ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

নেপালে সেরাম প্রস্তুতকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে দেশটির ১৫ লাখ নাগরিক। ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে নেপালেও এখন টিকার সংকট নিয়ে আশঙ্কাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কাঠমান্ডুও বর্তমানে সিনোফার্মের টিকার জন্য চীনের মুখাপেক্ষী হয়ে উঠেছে।

২ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলংকার হাতে করোনার টিকা রয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার ডোজ। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিকার জন্য বর্তমানে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কলম্বো। এর মধ্যে মজুদ ফুরিয়ে আসার গতিকে ধীর করতে দিনে ১৫ হাজারের বেশি টিকা প্রয়োগ করছে না দেশটি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারেই দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

সেরামের কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি করেছিল শ্রীলংকা। কিন্তু ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটিতেও অক্সফোর্ডের টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলংকা বর্তমানে চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের ছয় লাখ ডোজ টিকা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। দেশটির প্রত্যাশা, রাশিয়া ও চীন থেকে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা সংগ্রহে সমর্থ হবে শ্রীলংকা।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) বলছে, হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপে বিপর্যস্ত এশিয়ার দেশগুলোকে সহায়তার জন্য অন্যান্য দেশের সরকার ও ওষুধ কোম্পানিগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।

আইএফআরসির এশিয়াপ্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান আলেক্সান্ডার ম্যাথিউ বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আসন্ন সপ্তাহ ও মাসগুলোয় আমরা যদি পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়া ঠেকাতে চাই, তাহলে আমাদের টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতেই হবে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ ও টিকা নির্মাতা দেশ ভারতকেও এখন বিদেশী সরবরাহের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দেশটি এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে স্পুটনিক-ভি টিকা আমদানি শুরু করে দিয়েছে। দেশটিতে ঘাটতির কারণে টিকাদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে এ কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে জুলাইয়ের মধ্যেই ৩০ কোটি ভারতীয়কে টিকা দেয়ার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটি।

এখন পর্যন্ত ভারতের ১৫ কোটি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে প্রায় চার কোটি। এপ্রিলেও দেশটিতে দৈনিক টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দেশটিতে টিকা নিয়েছে ১৪ লাখ।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, সেখানে মার্কিন টিকা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।