রামুতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বাজারে টোল আদায়!

প্রকাশিত: ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২২

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

নিজস্ব প্রতিবেদক | ভোরের কক্সবাজার

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া বাজারে টোল আদায় করা হচ্ছে। নুরুল ইসলাম এবং আলী আহমদ নামে দুই ব্যক্তি এই টোল আদায় করছেন। এই কাজে সহযোগিতা করছেন রামু উপজেলা প্রশাসন। এমন অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের নিলামে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ ডাককারি হিসেবে নির্বাচিত রোকসানা আক্তার বেবি’র।

তাঁর অভিযোগ রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজারের নিলামে সর্বোচ্চ ডাককারি হওয়ার সত্বেও উপজেলা প্রশাসন তাকে কার্যাদেশ দেয়নি। তিনি এমন সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হয়ে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল মাসে এ বিষয়ে একটি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিটটিতে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে বিবাদী করা হয়েছে।

৫ এপ্রিল বিচারপতি জাফর আহমদ এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হক এর দ্বৈত বেঞ্চ রিটের উপর শুনানী শেষে রোকসানা আক্তার বেবি’র ইজারাদেশ বাতিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ইউএনও কর্তৃক বাছাইকৃত ইজারাদারের কার্যক্রমের উপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।

বাজারে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে উল্লিখিত দুই ব্যক্তির নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। বাজারে প্রতিটি গরু বিক্রি করা হলে ১৩ শ’ টাকার বেশি আদায় করা হচ্ছে। আর ছাগল বিক্রি করা হলে শতকরা ৫ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যদ্রব্য বিক্রি করা হলেও সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে বেশি টোল আদায় করা হচ্ছে। বিনিময়ে বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নুরুল ইসলাম এবং আলী আহমদ’র নাম সংবলিত রসিদ!

এ বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক রামুর গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার নিয়োগে স্থগিতাদেশ প্রদানের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন অবগত হয়েছে। এই বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। তিনি আরও জানান, বাজারটির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তহসিলদারের মাধ্যমে খাস কালেকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২য় সর্বোচ্চ নিলাম ডাককারী কর্তৃক টোল আদায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তার টোল আদায়ের কোন সুযোগ নেই। এখন এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।

জানাগেছে, চলতি বছরের ৩ মার্চ রামু উপজেলা প্রশাসন গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র জমা নেয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জন সমক্ষে গ্রহণ করা হয় দরপত্র। দরপত্র জমাদান শেষে রোকসানা আক্তার বেবি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ ডাককারি হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ দরদাতা নির্বাচিত হন যথাক্রমে আলী আহমদ, নুরুল আবছার এবং নুরুল ইসলাম। যা ওই দিনই উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক স্বীকৃত হয়।

বিধি মোতাবেক দরপত্র জমাদানের দিন রোকসানা আক্তার বেবি ২৭ লাখ টাকার পে-অর্ডার ফি জমা দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে বাকী টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। পাশাপাশি ভ্যাট এবং আয়করও পরিশোধ করেন।

তারপরও সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে উপজেলা প্রশাসন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরকারি আলী আহমদকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। যদিও আলী আহমদ বিধি মোতাবেক নিলামের দিন পে-অর্ডার জমা দেননি। নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ এনে উপজেলা প্রশাসন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরকারির কার্যাদেশ দেন। এরপর থেকে গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তার নামে গর্জনিয়া বাজারে টোল আদায় করা হচ্ছে।

যদিও সর্বোচ্চ ডাককারি রোকসানা আক্তার বেবি দাবি করছেন, শুরু থেকে তার নামে বাজারের ইজারা না দিতে উপজেলা প্রশাসন গড়িমসি শুরু করেন। চলতি বছরের ১০ মার্চ ইউএনও স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে তাকে ১ সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সেই চিঠি হাতে পান ১৬ মার্চ। ২১ মার্চ তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলেও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক রামু শাখা খোলা উপজেলা হাট বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট ( যার নং ০২০০১১১০০০০০২২৭) বন্ধ রাখা হয়। ফলে তিনি টাকা জমা দিতে পারেননি।

একদিন পর অর্থাৎ ২২ মার্চ ইউএনও প্রণয় চাকমা স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইজারাদার হিসেবে তার নাম বাতিল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা প্রদানের জন্য একটি চিঠি তাঁর নামে ইস্যু করা হয়। সেই চিঠিও তিনি হাতে পান ৩০ মার্চ দুপুরে। পরদিন ৩১ মার্চ বিষয়টি লিখিতভাবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) তিনি অবগত করেন।
সময়ের অজুহাত দেখিয়ে রোকসানা আক্তার বেবি’র কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও অন্য ২টি বাজারের ক্ষেত্রে রামু উপজেলা প্রশাসন ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বাজার দুইটি হলো, মামুন মিয়ার বাজার এবং জোয়ারিয়ানালা বাজার।

মামুন মিয়ার বাজারের সর্বোচ্চ দরকারী চলতি বছরের ৩১ মার্চ ৫৬ হাজার টাকা এবং জোয়ারিয়ানালা বাজারের সর্বোচ্চ দরকারী একই দিন ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দেন। এরপর কার্যাদেশ নিয়ে উল্লিখিত দুইটি বাজার থেকে তারা নিয়মিত টোল আদায় করছেন।

এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেছেন উক্ত বাজারের সর্বোচ্চ ডাককারী রোকসানা আক্তার বেবি।