পিএমখালীর এক দুর্ধর্ষ প্রতারকের খপ্পরে এক দিনমজুর পরিবার!

প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৩

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

শামশুল আলম শ্রাবণ:

কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে এক দুর্ধর্ষ প্রতারকের আভির্ভাব ঘটেছে। তার ভয়ানক প্রতারণা থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মান্যগণ্য ব্যাক্তি থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তশালী পরিবার কিংবা দিনমজুর সবাই তার একের পর এক শিকারে পরিণত হচ্ছে।

সৌদি আরবের কয়েকটি নিমার্ণ প্রকল্পগুলোর কাজ করিয়ে শ্রমিকদের মজুরি, নির্মাণ সামগ্রীর টাকা আত্মসাৎ করাসহ এমন কোনো দুঃসাহসী অপকর্ম নেই যা সে করেনি ইতিমধ্যে। এমনকি নিজেকে একজন কথিত সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধির সাথে তার শ্বশুরের বিশ্বস্ত তল্পিবাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে এই প্রতারক। থানা অথবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে কখনও কখনও বিভিন্ন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে জমা পড়লেও সেসব ব্যাপারে একেবারেই বেপরোয়া এই দুর্ধর্ষ প্রতারক।

বিদেশ থেকে কিভাবে স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার, নানা প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাৎ করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কীভাবে সেগুলোতে রেহায় পেতে হয় সেটাও সে ভালো মতোই রপ্ত করেছে। আর এভাবে দিনে দিনে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে সে। তার শিকারের থলিতে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে ভুক্তভোগীর নাম। দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তদের তালিকা।

এতক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছে তিনি হলেন- কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পাতলী মিয়াজী পাড়ার মৃত আপলার পুত্র মনিরুল আলম (৪২)। সৌদিআরব প্রতারণা করার অভিযোগে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ আটকও হয়েছিলো। অল্প কিছুদিন কারাবাস করে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে। এরপর আবারও শুরু করে সেই পুরোনো কৃত্তিকলাপ। প্রভাবশালীদের ইন্ধনে যখন যেভাবে ব্যবহার হওয়ার হয়ে আসছে এই দুর্ধর্ষ প্রতারক মনিরুল আলম। সৌদি প্রশাসনের সাথে পেরে উঠা এই প্রতারকের সাহস এখন আকাশচুম্বি। সৌদি প্রশাসন যেখানে নস্যি সাধারণ মানুষ তার কাছে কিছুই নয়।

২০২২ সালে সৌদি আরবে পিএমখালীর মিয়াজী পাড়া এলাকার এক দিনমজুর ছৈয়দ উল্লার ছেলে সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিলের সাথে পার্টনারশিপ একটি টাইলসের কাজ নেন তিনি। পরবর্তীতে কাজ শেষ হলে পার্টনার জলিলের সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক মনিরুল আলম পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধিসহ কক্সবাজার সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে ভুক্তভোগী আব্দু জলিলের মা জমিলা খাতুন।

জানা যায়- পুত্রের দিনমজুরের কাজ করে ঘাম জড়ানো টাকা ফেরত পেতে তিনি প্রশাসনসহ সমাজের নানা স্থরের বিভিন্নজনের ধারে ধারে ঘুরছেন। পর্যাপ্ত কাগজপত্র না থাকায় তিনি তার বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারছেন না। এরপর থেকে জলিলের পরিবারে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। ঋনের বোঝা নিয়ে সে এখন অসহায় দিনাতিপাত করছে। না পারছে ঠিক মতো বাড়িতে টাকা দিতে, না পারছে অন্য কোন কাজ জোগাড় করে পরিবারের ঠিক মতো যত্ন নিতে। এর উপর রয়েছে বিভিন্ন পাওনাদারদের চাপ। কিন্তু প্রতারক মনিরুল আলম কর্তৃক টাকা ফেরত পেলে একটু কমতো ঋনের বোঝা। যদিও তার মা টাকা ফেরতের আশায় এখনো নানা মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন।

জমিলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে জলিলকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋন এবং স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমার ছেলের টাকা মেরে দেশে চলে আসা মনিরুল কাছে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা।

ভুক্তভোগী আব্দু জলিলের সাথে ইমুতে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান, অভিযুক্ত মনিরুল আলমের সাথে জলিল যৌথভাবে একটি ভবণের টাইলসের কাজ নেন। কাজ শেষে ৪২ হাজার ৭৯৩ রিয়াল বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে গোপনে বাংলাদেশে চলে আসে প্রতারক মনিরুল আলম। এতে জলিলের মজুরির ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকাও হাতিয়ে পালিয়ে আসেন মনিরুল আলম।

তিনি আরোও বলেন, বিভিন্নভাবে ঋন করে সৌদিতে এসেছিলাম। মনে করেছি টাকাগুলো পেলে ঋনের বোঝা একটু কমবে। কিন্তু এই প্রতারকের ফাঁদে পড়ে আমি এবং আমার পরিবার আজ নিঃস্ব।

কাজটি নেওয়ার সময় সাক্ষী হিসেবে ছিলেন বাবুল নামের আরেক প্রবাসী। জলিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাবে জানিয়ে বাবুল বলেন, মনিরুল আলম আর জলিল যৌথভাবে একটি কাজ নেন। ওই কাজে জলিলের লভাংশের সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাবে জলিল। ওই টাকা ফেরত পেতে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেও কোন সুরাহা করা যায়নি। টাকাগুলো কোনভাবে ফেরত দিতে রাজি হচ্ছেন না মনিরুল আলম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল বলেন, প্রতারণা করে জলিলের সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে মনিরুল আলম। একথা একদম সত্য। জলিল দিনমজুর পরিবারের সন্তান এবং আইনী জটিলতায় টাকাগুলো ফেরত দিতে রাজি হচ্ছেনা এই প্রতারক। তাকে বেঁধে রেখে টাকাগুলো আদায় করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছিনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মনিরুল আলম ছোটবেলা থেকে প্রতারণা করাই তার নেশা ছিলো। সম্প্রতি বিভিন্ন দরিদ্র লোকের কাছ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক, তাদের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা করে নিতেন। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর নিশ্চয়তা প্রদান করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং কোনো কার্যক্রম না দেখে বার বার তাকে টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলেও এ পর্যন্ত কাউকে টাকা ফেরত দেননি।

জলিলের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশে চলে আসার বিষয়টি প্রতিবেককে স্বীকার করেছে অভিযুক্ত মনিরুল আলম। কিন্তু কেনো টাকাগুলো ফেরত দিচ্ছেন না, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান তিনি। প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হলে তিনি টাকাগুলো ফেরত দেয়ার বিভিন্ন সময় আশ্বাস দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও মনিরুল আলমকে আর পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় অভিযোগটির দায়ীত্বে থাকা কক্সবাজার সদর থানার এএসআই ফরিদের সাথে। তিনি বলেন, টাকা পাওয়ার বিষয়টি সাক্ষী এবং বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হতে পারলেও পর্যাপ্ত কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টের অভাবে বিষয়টি সুরাহা করা যায়নি।