একটা না একটা অজুহাত বের করেই যাচ্ছে

মিয়ানমারের কারণেই পেছাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনা

প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২০

Warning: Undefined array key "mode" in /home/vorercoxb/public_html/wp-content/plugins/sitespeaker-widget/sitespeaker.php on line 13
print news

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে যতবার আলোচনা পিছিয়েছে তা মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই হয়েছে। এখন কোভিড পরিস্থিতি, আগামীতে তাদের নির্বাচন। কদিন পরে বলবে যে, নির্বাচনের কারণে তারা আলোচনায় বসতে পারবে না। তারা একটা না একটা অজুহাত বের করেই যাচ্ছে। এছাড়া রাখাইনে এখন যুদ্ধ চলছে। তারা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এসব কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারই আলোচনা পিছিয়ে দিচ্ছে’— এমনটাই দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাপী চলছে করোনা (কোভিড-১৯) মহামারি। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে মে মাসে যে আলোচনার কথা ছিল তা হয়নি। আবার কবে আলোচনায় বসবে সে বিষয়েও কোনো ধরনের ইঙ্গিত মিয়ানমারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকলেও মিয়ানমারের আগ্রহের অভাবে বার বার তা পিছিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার একটি চুক্তি সই হয়। তার দুই মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হয়। ওই গ্রুপ গত দুই বছরে চার দফা বৈঠক করে। সর্বশেষ বৈঠক ২০১৯ সালের মে মাসে মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারের অনুরোধে সে বৈঠক দুইমাস পিছিয়ে মে মাসে ঠিক করা হয়। কিন্তু মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সে বৈঠকও বাতিল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা কার্যত থেমেই আছে।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সর্বশেষ আলাপ করার কথা ছিল চলতি বছরের মে মাসে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে গেল। যতবার পেছাচ্ছে তা মিয়ানমারের পক্ষ থেকেই। এখন করোনা, আগামীতে তাদের নির্বাচন; কদিন পরে বলবে যে, নির্বাচনের কারণে বসতে পারবে না। তারা একটা না একটা অজুহাত বের করেই যাচ্ছে। এখন তো কোভিড-১৯ এর ছুতা। এছাড়া রাখাইনে এখন যুদ্ধ চলছে। তারা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। এসব কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা আপাতত হচ্ছে না।

 

এদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজারে অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকতে দেখা গেছে। তবে সেই সমর্থনের সুযোগ সরকার কাজে লাগাতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মী আসিফ মুনীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অন্যদের ওপরে ভরসা করে বসে থাকলে হবে না। প্রতিবেশি দেশ ভারত কিংবা চীন হয়তো তারা কূটনৈতিক ভাষায় সহযোগিতার কথা বলছে। কার্যত স্বার্থ ক্ষুন্ন করে কেউই এ বিষয়ে এগিয়ে আসবে না। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয় পন্থা বা চীনের মধ্যস্থতা যে কাজ করছে না, তা এখন প্রমাণিত।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত চাপ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পরবর্তী কৌশল কী তা স্পষ্ট নয়। তবে আমি বলব, বাংলাদেশক কূটনৈতিক দিক থেকে আরো বেশি কৌশলী হতে হবে। আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোর সমর্থন কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে কীভাবে মিয়ানমারকে বাধ্য করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশকে ভাবতে হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মিয়ানমারের কাছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে মোট ৫ লাখ ৯৭ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এ বছরের শুরুতে একসঙ্গে ৪ লাখ ৯২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বাড়িঘর বানিয়েছে। সেসব আমাদের দেখিয়েছে। কিন্তু সেখানে এখনও যুদ্ধ চলে। তার ওপর সামনে মিয়ানমারে নির্বাচন। এছাড়া আছে করোনার প্রাদুর্ভাব। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে শিগগিরই তারা আলোচনায় বসতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।’

তবে এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘যেহেতু মিয়ানমার এ বিষয়ে কালক্ষেপণ করছে, সেহেতু ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।’

এদিকে জাতিসংঘসহ আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে যারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সমর্থন করে আসার পাশাপাশি রাখাইনে মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে আসছিল, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আপাতত তা চাপা পড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা তৈরি করেছে মিয়ানমার। সমাধানও মিয়ানমারকেই করতে হবে। অন্যরা সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত, চীন মিয়ানমারকে বলতে পারে, চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকে করতে হবে। আমরা বার বার তাদের অনুরোধ করছি। তারা রাজিও হয়েছে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা উৎসাহ দেখাচ্ছে না ‘

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিধনের উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের কয়েকটি শিবিরে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছে।

এদিকে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলার প্রাথমিক শুনানির পর এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ (আইসিজে) রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধসহ বেশকিছু নির্দেশ দিয়েছিল। গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব সাক্ষ্য-প্রমাণ রক্ষা করতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি আদেশ অনুযায়ী চার মাসের মধ্যে মিয়ানমার কী ব্যবস্থা নিয়েছে- তা আদালতকে জানাতে বলা হয়।

আইসিজের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী মিয়ানমার নির্ধারিত সময়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে তাতে কী বলা হয়েছে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।